রবিবারের সকাল। ভীষন ল্যাদ খাচ্ছি। বিছানা ছাড়তেই ইচ্ছে করছে না। সকাল ৭ বেজে গেছে। এমনিতে আমি ভোর ৪:৩০ টায় উঠি। শুধু তাই না, একবার ঘুম ভেঙে গেলে বিছানায় শুয়ে ল্যাদ খেতে পারি না। তাছাড়া অফিস বেরোনোর তাড়া থাকে। রান্না করার তাড়া থাকে। ব্রেকফাস্ট করার তাড়া থাকে। মানে রুটিনের মধ্যে থাকতেই হয়। নাহলে সব জায়গায় দেরি হয়ে যাবে। সত্যি বলতে কি এগুলো ফলস কারণ! আমার ভোরে ওঠার জন্য অন্য একটা কারণ আছে। যত মোটিভেশনাল স্পীচ শুনেছি আজ পর্যন্ত, সেখানে সব জায়গাতেই বলা হয় সফল যাঁরা হয়েছেন তাঁরা সবাই সকালেই উঠতেন মানে ওই ভোর ৪ টায় বা ৫ টায়। যেমন ধরুন বিল গেটস ভোর ৪ টায় ঘুম থেকে ওঠেন। উঠে মেডিটেশন করেন। ভীষন ডিসিপ্লিনড জীবন যাপন। আজ তাই তিনি এত বড় শিল্পপতি। ওনার যোডিয়াক সাইন স্করপিও। আমারও স্করপিও। অর্থাৎ যোডিয়াক সাইনে মিল আছে। তাই ভাবলাম আমিও যদি ভোরে উঠি, যদি মেডিটেশন করি তাহলে আমিও বুঝি একজন শিল্পপতি হতে পারবো। মানে বড় শিল্পপতি নাহলেও ছোটখাটো কোনো শিল্পপতি হলেই চলবে। তাই ভোর বেলা ওঠা, মেডিটেশন করা প্র্যাক্টিস করছি। দেখা যাক কি হই ভবিষ্যতে ! চাইলে আপনারাও ওনাকে ফলো করতে পারেন।
আজকে বিল গেটস হবার চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে দিলাম। শীতের সকাল। বলে রাখি এবারে কিন্তু কলকাতায় এখনই অল্প সল্প ঠান্ডা পড়েছে। ফ্যান চালানো তো নভেম্বরের শুরুর দিকেই ছেড়ে দিয়েছি আর রাতে পাতলা একটা কম্বল নিয়ে ঘুমাচ্ছি। ল্যাদ খেতে খেতে সারাদিনের কি কর্মকাণ্ড আছে সেটা একবার ভেবে নিলাম। জামা কাপড় কাচা, ঘর পরিষ্কার, বাথরুম পরিস্কার। নিজের মনেই বললাম এরপর আবার রান্নাও করতে হবে! মাসের শেষ, পকেটেও টান! কিছু খাবার অর্ডার দিতে গেলে অন্তত ৫০০ টাকা খরচ হবেই। যাতে সময় আর পরিশ্রম দুইই বাঁচে আবার খরচও বেশি না করতে হয় সেরকম একটা জব্বর আইডিয়া মাথায় এলো। Licious এর ready to Cook কিনলে কেমন হয়? এমনিতে অনেকদিনের ইচ্ছেও ছিল জিনিসটা কি চেখে দেখার। Oriental Basil Chicken অর্ডার করলাম। ডিসকাউন্ট দিয়ে দাম পড়লো ১৭৯ টাকা। এবার শুধু ভাত রাঁধলেই হবে আর চিকেনটা একটু গরম করলেই চলবে। অবশ্য ওদের অ্যাপ এ কিভাবে রান্না করতে হবে সেটার ভিডিও বানানোই ছিল। সেটা দেখে বানিয়ে নিলেই হবে।
Licious থেকে এর আগেও মাছ, মাংস কিনেছি। তবে সেটা বাড়িতে নিজের মত করে রান্না করেছি। আসলে বাজার থেকে মাছ মাংস কেনাটা আমার কাছে ভীষন সমস্যার কারণ আমি কাটাকুটি রক্তারক্তি দেখতে পারিনা। যদি দেখি তাহলে সেটা আর খেতে পারবো না। তাই অনলাইন অর্ডারটাই আমার কাছে ভালো একটা অপশন। মাঝে সব্জি বাজারও অনলাইন করতাম। কারণ ওরা অর্গানিক সব্জি দেয় বলে। কিন্তু বেশ কিছুদিন কেনার পর দেখলাম সব্জি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানে যেদিন নিলাম তারপরদিন থেকেই পচন শুরু হয়ে যাচ্ছে। তাই অনলাইনে সব্জি কেনা আপাতত বন্ধ। Licious এর প্যাকেজিং ভীষন ভালো। আর কোয়ালিটি একদম ফ্রেশ, সফট। লোকাল বাজারের থেকে একটু বেশি দাম পড়ে ঠিকই তবে ওই যে ধোবার ঝামেলা নেই, রক্তারক্তি, কাটাকুটির ঝামেলা নেই। অর্ডার করলে আপনার সময় অনুযায়ী বাড়িতে দিয়ে যাবে।
সকাল ৭:৫০ এ অর্ডার করেছিলাম আর টাইম স্লট দিয়েছিলাম সকাল ৮ থেকে ১০ টার মধ্যে। ওরা ৮:৩০ নাগাদ দিয়ে গেল। তখন অবশ্য আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে গেছি। প্যাকেটের গায়ে লেখা ২৩ তারিখের মধ্যে এটা রান্না করে নিতে হবে। আমি কিনেছি ২০ তারিখ। প্যাকেট এ লেখা No Added Artificial Preservatives. বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। আমি বিশ্বাসটাই করলাম। বেশ মশলা মাখানো কিছু মাংসের টুকরো। কিভাবে রান্না করবো তার ভিডিও আগেই দেখে নিয়েছি। রান্না করলাম। দুপুরে খেতে বসেছি। মাংস কিন্তু ভীষন সফট। তবে বাড়িতে রান্না করলে যে freshness থাকে বা টেস্ট হয় সেরকম স্বাদ কিন্তু একেবারেই পেলাম না। ওই ok ok মত টেস্ট। একটু কাঁচা পেঁয়াজ নিলাম। তারপর কিছুটা ভালো লাগলো। পরিমাণে ২৫০ গ্রাম। এক সাথে খেতে পারবো না। তাই রাতের জন্য রেখে দিলাম। কিন্তু মনে মনে বললাম এটাকে রাতেও খেতে হবে !
বুঝলাম সফল হতে গেলে শর্ট কাট রাস্তা ধরলে এরকমই ফলাফল হবে। আর ল্যাদ খেলে তো আর কথাই নেই। বিফল হবই। রবিবারের রাতে এটাই শিক্ষে হল যে বিল গেটস কেন, মিনিমাম ' আমি ' হতে হলে ল্যাদ খাওয়া যাবে না বা কোন শর্টকাট রাস্তা ধরলে চলবে না। পরিশ্রমী হতে হবে। শুধু মাত্র ভোরে উঠলেই হবে না, সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে। পরিশ্রমের বিকল্প নেই। আজ এই পর্যন্ত থাক। ভালো থাকবেন আপনারা...
0 মন্তব্যসমূহ
আপনার মূল্যবান মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করে !