যে সমস্ত বাঙালিরা ভাবেন যে, আলসেমিটা তাদের জাতিগত অধিকার, বলে রাখি, এই করোনার বাজারে, তাদের কপালে দুঃখ আছে। কারণ সমীক্ষায় দেখা গেছে, যাঁরা অলস জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে গুরুতর করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। এমনকি, এরকম করোনা রোগীদের মৃত্যুর আশঙ্কাও বেশি।
মূল বক্তব্য
- একটি নতুন সমীক্ষায় জানা গেছে যে, যাঁরা প্রতিদিন শরীরচর্চা করেন তাদের গুরুতর COVID-19 সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
- সমীক্ষাটি প্রায় ৫০,০০০ জন করোনা আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের ওপর করা হয়েছে।
- চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন, প্রতিদিন মাঝারি ধরণের বা তার থেকে বেশি ধরণের শরীরচর্চা করার।
বিস্তারিত
এই এপ্রিলে, ব্রিটিশ জার্নাল অফ স্পোর্টস মেডিসিনে একটি সমীক্ষা প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে , যারা প্রতিদিন শরীরচর্চা করেন তাদের গুরুতর COVID-19 সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে তুলনায় যাঁরা "কনস্টেন্টলি ইনাক্টিভ "। এই সমীক্ষাটি, ১লা জানুয়ারি,২০২০ থেকে ২১শে অক্টোবর ২০২০-র মধ্যে ৪৮,৪৪০ জন করোনা আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের ওপর করা হয়।
সমীক্ষা
এই সমীক্ষায়, প্রতিটি রোগীকে প্রতি সপ্তাহে তাদের ফিজিক্যাল এক্টিভিটির কথা জানতে চাওয়া হয়। এরপর তাদের দেয়া ফিজিক্যাল এক্টিভিটি রিপোর্ট আর তাদের করোনা রেস্পন্সের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে, গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, যাঁরা "কনস্টেন্টলি ইনাক্টিভ ", অর্থাৎ যাঁরা সপ্তাহে ১০ মিনিট বা তারও কম সময় শরীরচর্চা করেছেন, তাঁদের আইসিইউ তে ভর্তি হবার রিস্ক ১.৭৩ গুন্ বেশি এবং মারা যাবার রিস্ক ২.৪৯ গুন্ বেশি তুলনায় যাঁরা সপ্তাহে ১৫০ মিনিট বা তার বেশি সময় শরীরচর্চা করেছেন। শুধু তাই না, যাঁরা "কনস্টেন্টলি ইনাক্টিভ ", অর্থাৎ যাঁরা সপ্তাহে ১০ মিনিট বা তারও কম সময় শরীরচর্চা করেছেন, তাঁদের হস্পিটালাইসড হবার রিস্ক ১.২ গুন্ বেশি, আইসিইউ তে ভর্তি হবার রিস্ক ১.১ গুন্ বেশি এবং মারা যাবার রিস্ক ১.৩২ গুন্ বেশি, তুলনায় যাঁরা সপ্তাহে ১১ মিনিট থেকে ১৪৯ মিনিট শরীরচর্চা করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাইসার পার্মানেন্টে মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষকরা জানান যে, এটি একটি পর্যবেক্ষণমূলক পরীক্ষা এবং এটি কোনও কারণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। রোগীদের দ্বারা বর্ণিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই এই পর্যবেক্ষণের ফলাফল প্রকাশিত।
US এ শরীরচর্চার গাইডলাইন
প্রতি সপ্তাহে, প্রাপ্তবয়স্করা ১৫০ থেকে ৩০০ মিনিট মাঝারি ধরণের ব্যায়াম করতে পারেন বা ৭৫ থেকে ১৫০ মিনিট ভারী ধরণের ব্যায়াম করতে পারেন। অন্তত পক্ষে সপ্তাহে ৫ দিন যদি ৩০ মিনিট দৌড়ানো যায় তাহলে করোনা ভাইরাস শরীরে খুব বেশি ক্ষতিই করতে পারবে না।
আমার মতামত
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ১৫০ মিনিট বা তার বেশি শরীরচর্চার বিষয়টা কতটা কার্যকর আমাদের ক্ষেত্রে ?
প্রথমেই বলি, আমরা তৃতীয় বিশ্বের বাসিন্দা। ভারতবর্ষ তথা পশ্চিমবঙ্গে আমাদের বাস। আমাদের খুঁটে খেতে হয়। সুতরাং প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের শরীরচর্চা যে করেই ফেলি তা বলা বাহুল্য। তবে গতবছর লকডাউন চলা কালে, আমার পরিচিত অনেক বাঙালিই দেখিয়ে দিয়েছিল আলসেমি কাকে বলে। তবে এখনো পর্যন্ত আমাদের দেশে সেই অর্থে কোন জায়গায়ই লকডাউন চলছে না। লোকজন দিব্য কাজ করছেন, ঘুরে বেড়াচ্ছেন, মিটিং মিছিল করে বেড়াচ্ছেন এবং করোনা ছড়িয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন ৫,৬,৭ হাজারেরও বেশি। হসপিটালে বেড পাচ্ছেন না, ভয়ে অনেকে টেস্ট করাচ্ছেন না। বাড়িতে থেকে কেউ কেউ সুস্থ হচ্ছেন, আবার হসপিটালে থেকেও মারা যাচ্ছেন।
সুতরাং যদি ভেবে থাকেন শুধু মাত্র ১৫০ মিনিট প্রতি সপ্তাহে শরীরচর্চা করলেই করোনা আপনার শরীরে ক্ষতি করতে পারবে না, তা কিন্তু না। শরীরচর্চার সাথে কোভিড বিধিও আপনাকে মানতে হবে। খিদে পেয়েছে বলে, নোংরা হাতেই ভিড় জায়গায় মাস্ক খুলে হাঁ হাঁ করে খেলে চলবে না। নোংরা হাতে চোখে মুখে গড়িয়ে পড়া ঘাম আপনি মুছবেন না। দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষের মত মাস্ক না পরে ভিড় জায়গায় হেঁচে কেশে দেবেন না। এতে আপনার সাথে সাথে আপনার পাশের জনেরও ক্ষতি করছেন, এটা মাথায় রাখবেন। দয়া করে কোভিড বিধি মেনে চলুন। নিজে সুস্থ থাকুন অপরকে সুস্থ রাখুন।
তথ্য ঋণ : CNBC make it, Changing America, SHAPE
আরও পড়ুন :
0 মন্তব্যসমূহ
আপনার মূল্যবান মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করে !