এই প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরছে যে, এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে কোরোনার টিকা প্রস্তুত করা সম্ভব হল। সাধারণত কোন রোগের টিকা তৈরী করতে গেলে বেশ কয়েক বছর লাগে। উদাহরণস্বরূপ ১৯৬০ সালে তৈরী মাম্পস এর ভ্যাকসিন ৪ বছর অবধি ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পরে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। আর এটা বিশ্বের দ্রুত প্রস্তুত টিকা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আবার এইচ আই ভি র জন্য ভ্যাকসিন প্রায় তিন দশক ধরে তৈরী হচ্ছে এবং এখনো সেটা ক্লিনিকাল ট্রায়ালের তৃতীয় ফেজে রয়েছে। সুতরাং দ্রুত প্রস্তুত এই করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক।
মূল বক্তব্য
- COVID-19 ভ্যাকসিনগুলি কীভাবে এত তাড়াতাড়ি তৈরী করা সম্ভব হয়েছে সেটা বোঝা গেলে এগুলি সম্পর্কে ভয় কমাতে পারে।
- রিসোর্স, পাবলিক সাপোর্ট, টেকনোলজি, অর্থ সহায়তা এই ভ্যাকসিন তৈরিতে গতি এনেছে।
ডাক্তার স্যাম সুন্ (Dr. Sam Sun), inDemic Foundation (একটি NGO যারা COVID-19 তথ্য দিয়ে থাকেন)- এর ডিরেক্টর এবং Baylor College of Medicine in Houston, TX এর চিফ রেসিডেন্ট, MedicalNewsToday- কে বলেন, এই ভ্যাকসিন তৈরির প্রসেস যদি নির্ভুলভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরা হয় তাহলে এই ভ্যাকসিনের প্রতি মানুষের বিশ্বাস তৈরী হতে পারে। কিভাবে এতো অল্প সময়ে, সমস্ত রকম সেফটি মেনে, ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে, সেটাই এখনের আলোচ্য বিষয়।
অন্য করোনা ভাইরাস
গবেষকরা, SARS-CoV-2 (যেটা কিনা COVID-19 এর জন্য দ্বায়ী) সম্পর্কে জানার পর গবেষণা শুরু করেছে, সেটা কিন্তু না। SARS-CoV-2 হল করোনা ভাইরাস পরিবারের একজন মেম্বার। National Institute of Allergy and Infectious Diseases এর মতে কয়েকশো করোনা ভাইরাস আছে। যার মধ্যে SARS (severe acute respiratory syndrome or SARS-CoV-1) , যেটা মহামারী তৈরী করেছিল ২০০২ তে এবং MERS (Middle East respiratory syndrome) যেটা করেছিল ২০১২ তে উল্লেখযোগ্য।
Dr. Eric J. Yager, (অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, মাইক্রোবায়োলজি, Albany College of Pharmacy and Health Sciences, Albany, NY) MedicalNewsToday -কে বলেন যে, ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা ভাইরাস নিয়ে গবেষণা চলছে। অর্থাৎ গবেষকদের কাছে অনেক আগে থেকেই এই ভাইরাস সম্পর্কে তথ্য আছে, তাদের গঠন, জিনোম এবং জীবনচক্র সম্পর্কে তথ্য আছে। তিনি আরো বলেন, ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে স্পাইক (S প্রোটিন) প্রোটিন চিহ্নিত করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের MERS প্রতিরোধের ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টাকেই COVID-19 ভ্যাকসিন তৈরির ভিত্তি হিসাবে তুলে ধরেছেন।
বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা
সাধারণ ভাবে একটা ভ্যাকসিন তৈরিতে প্রায় ১০-১৫ বছর সময় লাগে। কারণ ভ্যাকসিন তৈরিতে অনেক জটিলতা থাকে। যেহেতু এটা বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময়, তাই সময়টা একটা দারুন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গবেষকরা, করোনভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য অন্যান্য গবেষকদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য একত্রিত হন। যার ফলে জানুয়ারি, ২০২০ তে চিনের ওহান শহরে প্রথম নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রায় ১০ দিন পরেই SARS-CoV-2 এর ভাইরাল সিকোয়েন্স টি ধরতে পারেন। বিশ্বব্যাপী এই সহযোগিতা গবেষকদের সাহায্য করেছিল দ্রুত ভ্যাকসিন প্রস্তুত করতে।
COVID-19 ভ্যাকসিন গবেষণার জন্য অর্থ সহায়তা
ভ্যাকসিন গবেষণা ব্যয়বহুল। ২০১৮ সালে, দ্য ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ এর একটি সমীক্ষায় অনুমান করা হয়েছে যে সাধারণ একটি ভ্যাকসিন খুব তাড়াতাড়ি তৈরী করা এবং প্রাথমিক ক্লিনিকাল ট্রায়াল এর ক্ষেত্রে ব্যয় ৩১ – ৬৮ মিলিয়ন ডলার হতে পারে। এবং এই ট্রায়াল যদি অনেক লম্বা সময় ধরে চলে তাহলে আরো খরচ বাড়বে।
COVID-19 যেহেতু বিশ্বব্যাপী মহামারীর তৈরী করেছে সেহেতু খুব কম সময়ে ভ্যাকসিন বানাতে গেলে খরচটা অনেকটাই বাড়বে সাধারণ ভ্যাকসিন বানানোর তুলনায়। এক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি সমস্ত organization একত্রিত হয়ে ফান্ডিং করেছে এবং যেখানে যেখানে এই ভ্যাকসিন নিয়ে রিসার্চ চলেছে সেখানেই এই ফান্ডিং ব্যবহার হয়েছে।
জনগণের সহায়তা
ভ্যাকসিন তৈরির পর সেটা ট্রায়াল দেবার জন্য ভলেন্টিয়ার প্রয়োজন ছিল। এমনি সময়ে এই ভলেন্টিয়ার পাওয়া এবং ট্রায়াল ব্যাপারটা অনেকটা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু এক্ষেত্রে, অনেক সাধারণ মানুষ ভীষণ সাহসের প্রমান দিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন। যার ফলে ট্রায়ালের বিষয়টিতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি।
ভ্যাকসিন বানানোর টেকনোলজি আগে থেকেই জানা ছিল
COVID-19 ভ্যাকসিন তৈরির জন্য যে টেকনোলজি (mRNA and adenovirus টেকনোলজি) ব্যবহার হয়েছে তা কয়েক দশক আগে থেকে গবেষকরা ব্যবহার করছেন। যেমন Moderna বহু বছর ধরে mRNA টেকনোলজির ওপর কাজ করে আসছে।
প্রশাসনিক সহায়তা
সাধারণত একটা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরুর আগে প্রায় ২ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সময় লাগে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাজের জন্য। কিন্তু বিশ্বব্যাপী এই COVID মহামারীর কথা মাথায় রেখে, COVID কে প্রায়োরিটি দিয়ে সমস্ত অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার প্রচেষ্টা চলেছে। যেমন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ট্রায়ালের তথ্য জমা দেয়া রেগুলেটরি এজেন্সিকে, ওই তথ্যের যতার্থতা বিচার করা রেগুলেটরি এজেন্সির দ্বারা আবার, এই কাজে গতি আনার জন্য নতুন কর্মী নিয়োগ সবই দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা চলেছে।
আমার মতামত
এটা নিঃসন্দেহে বলা যেতেই পারে যে, এই মহামারী, ভ্যাকসিন গবেষণায় এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। বিশ্বব্যাপী, গবেষক, সাধারণ মানুষের একে অপরকে সহযোগিতার এক দৃষ্টান্ত নিদর্শন এই ভ্যাকসিন গবেষণার প্রক্রিয়া। যদি এইভাবেই পৃথিবীর সমস্ত সমস্যার সমাধান করা যেত তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর হয়ে উঠতো।
বিশেষ সতর্কতা : সমস্ত তথ্য এবং পরিসংখ্যান ইন্টারনেট থেকে পাওয়া।
কৃতজ্ঞতা : MedicalNewsToday healthline
আরও পড়ুন :
কোভিড-১৯-এর জন্য দায়ী সার্স-কোভ-২ (SARS-CoV-2) ভাইরাস কি সত্যিই বায়ুবাহিত?
0 মন্তব্যসমূহ
আপনার মূল্যবান মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করে !