মাথায়
টাক পড়া,মানুষের
জীবনে বেশ বড় একটা সমস্যা। আর সেটা যদি মেয়েদের ক্ষেত্রে হয়, তাহলে সেই সমস্যা অনেক বড়
আকার ধারণ করতে পারে। মজার ব্যাপার, এই সমস্যার স্থায়ী কোন
সমাধান, আমি
অন্তত খুঁজে পাইনি। তবে একটা উপায় অবশ্য আছে ,যদিও সেটা সবাই হয়ত নিজেদের
জীবনে প্রয়োগ নাও করতে পারে। কিন্তু প্রয়োগ করতে পারলে, একদম স্থায়ী সমাধান। আর সেই
বিশেষ উপায়টি হল "মেনে নেয়া "। লজ্জা না পেয়ে, কে কি ভাববে সেটা না ভেবে
যদি নিজের এই সমস্যাকে "স্বাভাবিক " বলে ভাবা যায়, তাহলে আর কোন সমস্যাই থাকে
না। যদি ভাবেন এটা কি করে সম্ভব ? তাহলে বলি,আজকের গল্প সেই মেয়েকে নিয়ে যে এই প্রশ্ন চিহ্নকে বিস্ময়
চিহ্নে পরিবর্তন করে দেবে।
Liliya Kukushkina |
এটা
লিলিয়া কুকুশকিনা-নুগমানোভার কাহিনী। মাথায় চুল না থাকার কারণে স্কুলে নানারকম
বিদ্রূপের শিকার হতে হতো লিলিয়াকে। অনেকে তো তাকে দেখে মনে করতেন, তার বুঝি ক্যানসার হয়েছে এবং ক’দিন পরেই মারা যাবেন তিনি। তাই তাদেরকে বোঝাতে
হতো যে, তাঁর ক্যানসার হয়নি আর তিনি মারাও যাচ্ছেন না।
আর এটা ছোঁয়াচে কোন রোগও না।
কিশোরী বয়সে পৌঁছানোর আগেই তাঁর মাথা চুল-শূন্য হয়ে যায়। এই কারণে স্কুলে তাকে প্রচুর বিদ্রূপের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো। তখন ওনার ১৭ বছর বয়স। স্কুলে ছেলেদের একটা গ্রুপ ছিল যাদের সাথে তিনি মিশতেন না। তাই তারা সামাজিক মাধ্যমে একটি গ্রুপ তৈরি করে এবং তার নাম দেয়, ‘মিস নুগমানোভা একটা নেড়া কুকুর।’
Liliya Kukushkina with her wig |
খুব স্বাভাবিক ভাবেই লিলিয়া খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। এই সব বিদ্রূপের হাত থেকে নিস্তার পাবার জন্য তিনি পরচুলা পড়তে শুরু করেন। হঠাৎই একদিন, নিজের সামাজিক সংগ্রাম নিয়ে একটি লেখা লেখেন এবং কোন পরচুলা ছাড়াই ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেন। ওই ছবিটি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে, আর অনেক মানুষ তাদের টাক বা চুল পড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে মন্তব্য করতে থাকেন। এর আগে পর্যন্ত লিলিয়ার বন্ধু, সঙ্গী বা সহকর্মীদের অনেকেই কখনো তাকে পরচুলা ছাড়া দেখেননি। তার মাথায় যে চুল নেই, এই ব্যাপারটাই তো অনেকে জানতো না।
Liliya Kukushkina |
Liliya Kukushkina |
লিলিয়া
এখন মাঝেমধ্যে পরচুলা পড়েন, তবে প্রয়োজনে না,
ফ্যাশনের জন্য। লিলিয়া মনে করেন, তার কোনো চুল নেই মানে এই নয় যে, অন্য সবার চেয়ে তিনি বেশি ভালো বা খারাপ। তার
ভাষায়, "যারা আমার প্রশংসা করতে
চাননি বা পারেননি সেসব মানুষকে দোষ দিতে চাই না।" এই শারীরিক সমস্যাটিকে ভালোভাবে জানা এবং এ
ধরণের আরো মানুষজনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর লিলিয়া আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে
উঠেছেন। লিলিয়া মনে করেন, এ নিয়ে মানুষের অযথা
বিরূপতা দূর করতে হলে এই বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়া জরুরি।
এখন
নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই টেকো মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন লিলিয়া। তিনি
এজন্য অনলাইনে একটি সহায়তা গ্রুপের তৈরি করেছেন। যাদের কাজ হলো টাক সমস্যায় থাকা
লোকদের নানা পরামর্শ ও সাহস দেয়া। এই আধুনিক যুগেও বিশ্বের কোথাও টাক পড়া বা চুল
হারানোর তেমন কোনো কার্যকরী চিকিৎসারি কথা শোনা যায় না। তাই টাকে চুল গজানোর
চটকদার বিজ্ঞাপনগুলো থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন লিলিয়া।
|
তিনি বলেন, "অনেক সময় অভিভাবকরা টাক পড়া বন্ধ করার চেষ্টা করেন এবং এমন সব পদ্ধতি বেছে নেন, যা শুনলে আমার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আমার বাবা-মাও সেই চেষ্টা করেছিলেন। আমরা লেজার প্রক্রিয়া এবং মাথার খুলির চামড়া পুড়িয়ে দেয়ার মতো পদ্ধতি চেষ্টা করেছিলাম। আমরা হরমোন ইনজেকশন দিয়েছিলাম, যা শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এসব না করার জন্য আমি সবাইকে পরামর্শ দেবো।" বরং এই শারীরিক সমস্যাটিকে মানিয়ে নেয়াই সবচেয়ে সহজ। আর এজন্যই এসব মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন লিলিয়া।
এই হল
লিলিয়ার গল্প। আশা রাখি, আপনারা, যাঁরা, টাক পড়ে যাচ্ছে বা মাথায় চুল
ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন রকমের সমাধান খুঁজে বেড়াচ্ছেন অনলাইনে, অফলাইনে, তাঁদেরকে একটু হলেও
অনুপ্রাণিত করবে এই গল্প।
0 মন্তব্যসমূহ
আপনার মূল্যবান মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করে !