আজ বিজয়া দশমী। আজ দেবী দুর্গার বিসর্জন (মানে,মা দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন)!বাঙালির মনে বিষাদের সুর! সত্যিই কি
বিষাদের সুর বাজছে বাঙালির মনে? ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ, টুইটার দেখলে তো তা মনে হচ্ছে
না! “শুভ বিজয়া” আর মিষ্টির হাঁড়ির ছবির তো ছড়াছড়ি চারিদিকে। শুধু কি তাই,
সন্ধ্যেতে কোন শাড়ি পরে সিন্দুর খেলবে তার প্ল্যান চলছে সিরিয়াসলি। চারিদিকেই তো বিজয়া দশমীর উৎসব পালন চলছে। আসলে ভায়া, বাঙালি আমরা! ওসব বিসর্জন-টিসর্জনের সুর খুব
তাৎক্ষণিক। “আসছে বছর আবার হবে” বলে বলে বিসর্জনটা আবাহনে চলে যায়। তাই ঢাক-ঢোল,
ডিজে, মাইক বাজিয়ে আজ পুরো উৎসবের দিন।
আর উৎসব চলবে নাই বা কেন? আজ তো বিজয়ের দিন। সেই কারণেই তো “শুভ বিজয়া”র
শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে চারিদিকে। আজ যেমন মা দুর্গার মর্ত্যলোক থেকে কৈলাসে
দেবালয়ে ফিরে যাবার দিন, তেমনি রামচন্দ্রের
রাবণ বধের দিনও আজকেই। শুধু কি তাই, মা দুর্গা আজকের দিনেই নাকি অসুরকে বধ
করেছিলেন। অশুভর প্রতি শুভের বিজয় আজকে। তাই বিজয় উৎসব তো হবারই কথা। প্রসঙ্গত বলে
রাখি, এসব কাহিনী আমার কল্পনাপ্রসূত নয়। সবই গুগল কাকিমার কাছ থেকে পাওয়া।
আমরা তো সবাই জানি যে, শরৎকালের এই পুজো দেবীর অকালবোধন। সীতা মা কে উদ্ধারের
জন্য রামচন্দ্র অকালবোধন করে দেবীর পুজো করেছিলেন। দেবীর আশীর্বাদে রাবণকে নিহত
করে সীতা মা কে উদ্ধার করেছিলেন। তাই প্রচলিত প্রথা হিসাবে এই “বিজয়”,
শ্রীরামচন্দ্রের বিজয়ের দিন। সারা দেশ জুরে, এই দিন দশেরা উৎসবে অনুষ্ঠিত হয়
রাবণবধের অনুষ্ঠান।
চিত্র :দশেরা চিত্রঋণ :bankbazaar.com |
পণ্ডিত নবকুমার ভট্টাচার্য বলেন, “সাধন জগতে ‘বিজয়া’ কথাটির তাৎপর্য হলো— মহাদেবীর বিশেষ আবির্ভাব ক্ষণে তাঁরই প্রসাদে তাঁরই প্রসন্নতায়
ধর্ম,
অর্থ, কাম ও মোক্ষলাভ। যাঁরা শ্রেয়কাম,
তাঁরা সংসার বন্ধনরূপ অজ্ঞানতার প্রতি বিজয়প্রাপ্ত হয়ে
মোক্ষলাভ করেন। অশুভের পরাজয়ে শুভের উদ্ভব এদিন থেকেই। সেকারণে বিজয়া আনন্দের দিন,
উৎসবের দিন। প্রীতি ও সম্প্রীতির দিন।”
রাবণের পরাজয় এবং মৃত্যু ছাড়াও এই দিনে ইন্দ্র বৃত্রাসুরকে যুদ্ধে আহ্বান করে
বধ করেছিলেন। এই যুদ্ধে বিষ্ণু ইন্দ্রের রথের সারথি ছিলেন আর মরুদ্গমন ছিলেন
সহকারী। বৈদিক যুগে হওয়া ইন্দ্রের ওই বৈষ্ণবী শক্তির আশ্রয়ে বৃত্রবিজয়ী লীলাই
মহামায়ার পুজোকেও অসুর বিসর্জনের এক পদ্ধতি মানা হয়।
আরও একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। তা হল সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী,
মহালয়ার প্রাক-সন্ধ্যায় অর্থাৎশুক্লপক্ষের চতুর্দশীতে
কাত্যায়নী মুনির কন্যারূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। আর এই
দশমীর দিন মা দুর্গা মহিষাসুর কে বধ করেছিলেন। তাই দিনটি বিজয় উৎসবের দিন।
চিত্র : অসুর বধ |
তাহলে, এইসব কাহিনীর কাঁধের ওপর ভর করে বলা যেতেই পারে, আজ দশমী, আজ বিজয়
উৎসবের দিন। তবে বিষাদের সুর যে বাজে না তা নয়! যাঁরা বয়োজ্যেষ্ঠ তাঁরা এখন
কাঁদেন বিসর্জনের দিন মায়ের প্রতিমায় মিষ্টি খাওয়াতে খাওয়াতে। “আবার এস মা” এই বলে,
জলে চোখ ভাসান! আসলে এই পাঁচটা দিন মায়ের প্রতিমাকে তাঁরা নিজের মেয়ে হিসাবেই
দেখেন। মেয়েই বাপের বাড়ি আসাই মনে করেন। আর বিসর্জনের দিন মেয়ের বাপের বাড়ি থেকে
বিদায়ের দিন। আবার একটা বছর অপেক্ষা, মেয়ের বাপের বাড়ি ফেরার! তাই কান্নাটা আসা স্বাভাবিক মনে হয়! আর এই কারণেই বিজয়ার দিন বাঙালির মনে বিষাদের সুর অল্প হলেও বাজে।
চিত্র : দেবী বরণ
চিত্রঋণ :facebook.com
|
“শুভ বিজয়া”র প্রীতি ও শুভেচ্ছা ! ভালো থাকবেন সবাই।
2 মন্তব্যসমূহ
Besh bhalo👍👍
উত্তরমুছুনসুন্দর হয়েছে ধন্যবাদ
উত্তরমুছুনআপনার মূল্যবান মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করে !