Ticker

6/recent/ticker-posts

শনিবারের বারবেলা


জানি না,কেন লোকে  শনিবারের দুপুরবেলাকে  বারবেলা বলে? বারবেলার ডিকশনারী মানে হল “দিনের যে অংশে শুভকার্য করা শাস্ত্রানুসারে নিষেধ” ছোটবেলায় শুনেছি ওই দুপুরবেলা নাকি ভূতেরা ঘরাফেরা করে। ওত পেতে বসে থাকে। একটু এদিক ওদিক দেখলেই ঘাড়টা মটকে দেবে! কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন আজও জিজ্ঞাসা চিহ্নের মত খোঁচা দেয়, আচ্ছা ঘাড় মটকে ভূতেদের কি লাভ ? কেউ জানলে একটু উত্তর দেবেন প্লিজআবার যারা মেছভূত আছে,  তারা নাকি রাস্তার ধারে অপেক্ষা করে। এই ধরুন আপনি দু কেজি ওজনের একখানা কাতলা মাছ নিয়ে যাছেন আর মনে মনে ভাবছেন বাড়িতে গিয়ে বলবেন ভালো করে কালিয়া রান্না করতে আর তক্ষুনি একটা মেছো ভূত আপনার চোখের আড়ালে আপনার সমস্ত চিন্তা ভাবনায় কালিয়া ঢেলে মাছের ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে ভ্যানিশ! আপনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় ! হয়ত খানিক ভয় পেয়ে, আর যাকিছু সঙ্গে ছিল সব ফেলে দিয়ে ভূত ভূত বলে দৌড়ালেন। এই মেছো ভূতদের নজর নাকি শুধু মাছের দিকেই থাকে,মাছের মালিকের দিকে নয়।তাই এই যাত্রায় আপনার মাছ হাওয়া হলেও ঘাড়টি সুরক্ষিত।

ছোটবেলায়  আমার  অত শাস্ত্র জ্ঞান ছিল না (এখনো নেই যদিও)। শুভ অশুভের তফাৎ টাও বুঝতাম না। তাই শনিবারের দুপুরবেলাকে কখনই বারবেলা ভাবতে পারতাম না, বরং আনন্দমেলাই লাগত। কারণ অপেক্ষা করে থাকতাম কখন রেডিও তে বেজে উঠবে “মাথার ঘন চুল যখন মরুভুমি হয়ে যায়,ওয়েসিস নিয়ে আসে মরুদ্যান মেঘের ছায়ায় ছায়ায়” , শ্রাবন্তি মজুমদার। খুব সম্ভবত  কলকাতা ‘খ’ চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি হত। “মাথার ঘন চুল যখন মরুভুমি হয়ে যায়” এই লাইনটা তখন বিশেষ বুঝতাম না। এখন বুঝি। তারপরই আসতো ফিনাইল এক্স নিবেদিত রহস্য নাটক। অনুষ্ঠানটির নামছিল “শনিবারের... বারবেলা “। নারী কণ্ঠে বেজে উঠলো “ওইইই সময় হয়েছে, হ্যাঁআআআ  , এই সময়টা তো”, তারপর একটু বেশ ভারী রহস্যময় পুরুষ কণ্ঠে ভেসে এলো “শনিবারের... বারবেলা “এর সাথে মরচে ধরা লোহার দরজা খোলার শব্দ ট্যাঁ আ আ আ ...সারা গ্রাম নিস্তব্ধ, কাক পক্ষীরও টের পাওয়া যায় না, রাস্তায় একটা লোকও নেই আর তার সাথে তাকানো যায় না এমন রোদ্দুর,  হালকা লু বইছে। নিজেকে নিঃসঙ্গ ভাবার অনুভূতি মনে একটা ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছেতখনো রান্না ঘরে খুন্তি নারার আওয়াজ, আমি রেডিও টা সঙ্গে নিয়ে ভয়ে ভয়ে নাটক শুনছি। জানতাম ওই ভয় আমায় দুপুর পেরিয়ে,  বিকেল পেরিয়ে রাত পর্যন্ত কিমবা পরের দিনের রাত পর্যন্ত তাড়া করবে, কিন্তু ভয় পাওয়ার নেশা এমনই, কোন একটা শনিবারও শুনতে ভুলতাম না অনুষ্ঠান দুটো।

শনিবার ছিল হাফ ছুটি। বাড়ির সামনেই স্কুল। পড়াশোনায় কোনদিনই বিশেষ মন ছিল না। শুধু ভাবতাম কখন ছুটি হবে আর বাড়ি গিয়ে রেডিও শুনবো। আমার অবশ্য অনেক শনিবারই ছুটি থাকত। কারণ স্কুল যেতে আমার ভালো লাগত না। রেডিও শোনার পর চলতো গুছিয়ে খাওয়া দাওয়া, সবাই মিলে একসাথে মাটিতে বসে। তারপর ঘুম। বিকেল হতেই মাঠে খেলতে চলে যেতাম বন্ধুদের সাথে।

এখন আমি একা থাকি। সবাই মিলে মাটিতে বসে খাওয়া আর হয় না। টেবিলে বসে খাবার খাই সবাই এক জায়গায় হলে। এখন খাবার খাওয়াটা বেঁচে থাকার জন্য। গুছিয়ে খাবার অভ্যেস টা আর নেই। এখন সব মেপে ঝুপে খেতে হয়। কতটা প্রোটিন, কতটা ফ্যাট, কতটা বা কার্বোহাইড্রেট  খাবো তার হিসেব আগে থেকে করা আছে। শনিবার অফিসও হাফ ছুটি দেয় না। জানি না রেডিও তে এখনো ওই অনুষ্ঠান গুলো হয় কিনা! ভূতে ভয় এখন আর নেই আমার, তবে অন্ধকারকে ভয় লাগে। ওয়েসিস শ্যাম্পুর খুব প্রয়োজন আমার।কারণ মাথা এখন মরুদ্যান খুঁজছে। প্রয়োজন একটা শনিবারের বারবেলার, সবাই মিলে একসাথে গুছিয়ে খাবার খাওয়ার, কিমবা ধুর আজ শনিবার আজ অফিস ছুটি আমার, এটা বলার।   



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

আপনার মূল্যবান মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করে !